লেননের চিরনিদ্রার চল্লিশ বছর

ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলাম, চল্লিশ বছর পার হয়ে গেল লেননের চিরনিদ্রার। আমারও জন্মের আগের কিংবদন্তি এই সংগীত শিল্পীর গানের সঙ্গে আমার পরিচয় বছর কুড়ি আগে। আসলে অঞ্জন দত্ত, সুমনের চাটুজ্যের গানের ভেলায় ভেসেই তো লেনন-ম্যাককার্টনি, বিটলস, পিঙ্ক ফ্লয়েড, বব ডিলানের গানদরিয়ায় গিয়ে পড়েছিলাম।

আজ আবার এসব কথা মনে পড়তেই ভাবতে বসলাম, ষাট-সত্তরের দশকেই পাশ্চাত্যে যে সুরের ধারা বইতে শুরু করেছিল, তা বাংলার তীরে এসে পৌঁছতে প্রায় বছর কুড়ি লেগে গেল কেন? হয়তো বাংলা গানের শ্রোতা তৈরি ছিলেন না। তা নাহলে মহীনের ঘোড়াগুলি রেস শুরু করতে না-করতেই থেমে গেল কেন? পরে নব্বইয়ের দশকে অঞ্জন-সুমন বাংলা গানে যখন তারুণ্যের জোয়ার আনলেন, তখন তাঁরা কিন্তু নিজেই মাঝবয়েসি। শিল্পী ও শ্রোতাকে তৈরি হতে-হতে দুই দশক লেগে গেলেও আশার কথা এই যে, অঞ্জন-সুমন-নচিকেতা-শিলাজিতের আগমনের ফলেই নতুন সহস্রাব্দ শুরু হতে-হতে বাংলা গানের জগতে হল ব্যান্ড গানের বিরাট বিস্ফোরণ, তারই বছর দশেক পর অনুপমের আগমন। এইভাবেই গানের ধারা দেশ থেকে দেশ, সময় থেকে সময়ে বয়ে চলেছে নিরবধি।

তাই তো আজও আমরা শুনে চলেছি লেনন-ম্যাককার্টনি, বিটলস, পিঙ্ক ফ্লয়েড, বব ডিলানকে। আমরা কেন, আমাদের পরের প্রজন্মও শুনছে। আজই আমার বন্ধুর মেয়ের কণ্ঠে শুনছিলাম বিটলস-এর সেই কালজয়ী গান-- হেই জুড। এই নামেই বাংলায় একটা ছোট গল্পও আছে। লিখেছিলেন দেবীপ্রসাদ সিংহ। তাই লেনন শুধু কণ্ঠকেই নয়, কলমকেও অনুপ্রাণিত করেছেন বলতে হয়।

লেননের কথা যখন উঠলই, তখন বিটলস-কে নিয়ে ড্যানি বয়েলের সিনেমা 'ইয়েসটার্ডে'-র কথা না-বলে থাকতে পারছি না। ইয়েসটার্ডে-ও বিটলস-এর আরেক কালজয়ী গান। এই সিনেমায় বয়েল একটি গান-পাগল ছেলের গল্প বলেছেন, যে নিজের চারদিকে এমন এক পৃথিবীকে প্রত্যক্ষ করছে, যেখানে বিটলস-এর কোনও অস্তিত্বই নেই। শুধু সে-ই জানে বিটলস কী, এই ব্যান্ডের শিল্পী কারা, এবং তাঁদের গানগুলোই বা কী। সত্যিই এমন এক পৃথিবীর কল্পনাও করা যায় কী!

যায় না হয়তো। তাই তো আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারানোর পরেও লেনন বেঁচে থাকেন অজস্র শ্রোতার হৃদয়ে, উঠতি প্রজন্মের কণ্ঠে, লেখকের কলমে।

লেনন হত্যা একটা কথাই মনে করিয়ে দেয়, আমাদের শুধু লড়াইটাই সম্বল। কেননা চল্লিশ বছর আগে লেননের আততায়ী ছিলেন তাঁরই এক ভক্ত। যিনি লেননের কিছু গান ও মন্তব্য সহ্য করতে পারেননি। লেনন একবার বলেছিলেন, "জিশুর চেয়েও বিটলসের জনপ্রিয়তা বেশি"। এই কথা অসহনীয় লেগেছিল মার্কিন নাগরিক মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যানের। এ ছাড়া, লেননের 'গড' ও 'ইমাজিন' গানও তিনি সহ্য করতে পারেননি। এসব কারণেই চ্যাপম্যান গুলি করে হত্যা করেছিলেন লেননকে।

এই অসহনীয়তার অন্ত পরেনি আজও।

Comments

Popular posts from this blog

GREAT BOYS STOP WARS

প্রেমের একদিন প্রতিদিন